Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কীটপতঙ্গ পরাগায়ন-কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির টেকসই প্রযুক্তি

ফুলের পরাগধানী থেকে পরাগরেণু স্থানান্তরিত হয়ে ফুলের গর্ভমুণ্ডে পতিত হওয়াকে পরাগায়ন (Pollination) বলে। পরাগায়ন দুই ধরনের- (১) স্ব-পরাগায়ন (Self-pollination) (২) পর-পরাগায়ন (Cross-pollination)। স্ব-পরাগায়নের ক্ষেত্রে পরাগরেণু একই ফুলের গর্ভমুÐে অথবা একই গাছে অন্য একটি ফুলের গর্ভমুÐে পতিত হয় কিন্তু পর-পরাগায়নের ক্ষেত্রে পরাগরেণু একই প্রজাতির অন্য একটি গাছের ফুলের গর্ভমুণ্ডে অথবা একই গাছের অন্য একটি ফুলের গর্ভমুÐে পতিত হয়। পরাগায়নের মাধ্যমে নিষেকের ফলশ্রæতিতেই ফুলের গর্ভাশয় ফলে পরিণত হয় এবং ডিম্বকসমূহ বীজে পরিণত হয়। সুতরাং ফল ও বীজ তৈরির জন্য পরাগায়ন অত্যাবশ্যক প্রক্রিয়া। আর এ অত্যাবশ্যক প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়ে থাকে কীটপতঙ্গ, পাখি, বিভিন্ন ধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণী, বাতাস, পানি এবং মহাকর্ষীয় বল ইত্যাদি বাহকের মাধ্যমে। এসব বাহকের মধ্যে শুধু কীটপতঙ্গ দ্বারাই পরাগায়ন নির্ভর করে পৃথিবীর তিন-চতুর্থাংশ বেশি ফসলের উৎপাদন। যার অধিকাংশই ফল, সবজি, তেল, আমিষ, নাট, মসলা, কফি এবং কোকো জাতীয় ফসল।
কীটপতঙ্গ হচ্ছে মাঠ ও উদ্যান ফসলের জন্য সবচেয়ে সাধারণ এবং কার্যকরী পরাগায়নকারী
(Pollinator)। এদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মৌমাছি, মাছি, বিটল, প্রজাপতি, মথ, বোলতা ইত্যাদি।
গবেষণায় দেখা যায়, শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি পুষ্পধারণকারী উদ্ভিদের পরাগায়ন নির্ভর করে কীটপতঙ্গ তথা বিভিন্ন প্রজাতির মধু সংগ্রহকারী মাছির ওপর। পৃথিবীতে ২৫০০০ এর বেশি প্রজাতির মধু সংগ্রহকারী মাছি আছে। যার মধ্যে রয়েছে মৌমাছি, ভ্রমর, স্টিংলেস-বি, সলিটারি-বি ইত্যাদি।
আবার এই মাছিগুলোর মধ্যে মৌমাছি পৃথিবীর ৭০% চাষাবাদকৃত ফসলকে পরাগিত (চড়ষষরহধঃব) করে থাকে। চাষাবাদকৃত ফসলের জন্য মৌমাছি হচ্ছে খুবই দক্ষ পরাগায়নকারী। এদের দেহের বিভিন্ন অংশ যেমন- বক্ষ, পা ইত্যাদি রোমে আবৃত যা পরাগরেণু ধারণ ও বহনের জন্য পরিবর্তিত হয়েছে এবং এরা দীর্ঘ সময় ধরে ফুলে ফুলে অবিরাম ঘুরে বেড়িয়ে পরাগায়ন ঘটাতে পারে এবং বিভিন্ন জলবায়ুতে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
সম্প্রতি বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে যে, সমগ্র পৃথিবীব্যাপীই পরাগায়নকারী কীটপতঙ্গের (চড়ষষরহধঃড়ৎ) সংখ্যা এবং বৈচিত্র্যতা কমে যাচ্ছে যা কৃষি উৎপাদন সংরক্ষণ এবং জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। পলিনেটরের আবাসস্থল কমে যাওয়া, ভ‚মি ব্যবহারের পরিবর্তন, একই ফসলের চাষ (গড়হড়পঁষঃঁৎব) বৃদ্ধির প্রকটতা, আধুনিক কৃষি উপকরণ যেমন- সার,              বালাইনাশকসহ রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার বৃদ্ধি ও যথেচ্ছা ব্যবহার এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে তাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক কীটপতঙ্গ পলিনেটর কমে যাওয়ার একটি নির্দেশক হচ্ছে যে, প্রয়োজনীয় সব কৃষিপরিচর্যা করা সত্তে¡ও ফসলের ফলন ও গুণগত মান কমে যাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে দেখা যায় যে, ভারতের হিমাচল প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে, উত্তর পাকিস্তানে এবং চীনের কিছু কিছু অংশে সব কৃষিপরিচর্যা করা সত্তে¡ও ফলজাতীয় শস্য যেমন- আপেল, আলমন্ডস, চেরি এবং নাশপাতির উৎপাদন ও গুণগতমান কমে যাচ্ছে।
পলিনেটরের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন ফসলের ফলন ও গুণগতমান কী পরিমাণ কমেছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। যদিও টেকসই কৃষি উন্নয়নের জন্য বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশসহ হিমালয়ান অঞ্চলে (ভারত, পাকিস্তান, ভুটান ইত্যাদি) শস্যের পরাগায়নের জন্য নিয়ন্ত্রিত মৌমাছির ব্যবহার নেই বললেই চলে। তবে একটু সুখের কথা বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এখন কিছু ফসলের যেমন- সরিষা চাষকৃত এলাকায় এবং লিচু বাগানে নিয়ন্ত্রিত মৌচাষ কার্যক্রম খুব স্বল্প আকারে হলেও শুরু করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, হিমালয়ান অঞ্চলে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে মৌমাছি পালন করে তাদের দ্বারা পরাগায়ন ঘটিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফলের ফলধারণ ও গুণগতমান বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ফল ঝরে পড়া কমে গেছে। উদাহরণস্বরূপ- আপেল, পিচ, পাম, সাইট্রাস, স্ট্রবেরি ইত্যাদি ফলের ফলধারণ বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে- ১০, ২২, ১৩, ২৪ এবং ১১২% এবং ফলের ওজন বেড়েছে যথাক্রমে- ৩৩, ৪৪, ৩৯, ৩৫ এবং ৪৮%। আবার দেখা গেছে, মৌমাছি পরাগায়নের দ্বারা লেবু জাতীয় ফলের রস ও মিষ্টতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিভিন্ন ধরনের সবজি জাতীয় ফসল যেমন- বাঁধাকপি, ফুলকপি, মুলা, লেটুস ইত্যাদি ফসলের ফলধারণ বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে- ২৮, ২৪, ২৩ এবং ১২% এবং বীজধারণ বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে- ৪০, ৩৭, ৩৪ এবং ৯%। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, নিয়ন্ত্রিত মৌমাছি পরাগায়ন তেলবীজ জাতীয় ফসল যেমন- সরিষা ও রাইজাতীয় ফসল এবং সূর্যমুখীতে জাতভেদে ২০-৪০% পর্যন্ত ফলন বৃদ্ধি করে এবং এছাড়াও বীজে তেলের পরিমাণ ও বীজের অংকুরোদগম হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয়। মসলা জাতীয় ফসল যেমন- পেঁয়াজ বীজ, ধনিয়া, কালিজিরা, মৌরি, শলুক, ফিরিঙ্গি ইত্যাদি ফসলের ফলন গড়ে ২০-৩০% বেড়ে যায় এবং বীজের সজীবতা ও অংকুরোদগম হারও বৃদ্ধি পায়।
পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে যেমন- যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপ এবং জাপানে মৌমাছি একটি কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দীর্ঘ সময় থেকেই বিভিন্ন ফসল যেমন- আপেল, আলমন্ডস, নাশপাতি, পাম, কুমড়াজাতীয় ফসল এবং বিভিন্ন ধরনের চেরিতে পরাগায়নের জন্য নিয়ন্ত্রিত উপায়ে মৌমাছি ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং ফসলের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ পরাগায়নই নিশ্চিত করে সর্বোচ্চ সংখ্যক ফলধারণ এবং সর্বোচ্চ ফলন। বিভিন্ন উৎপাদন উপকরণ যেমন- হরমোন, ভিটামিন, সার, আগাছানাশক, ছত্রাকনাশক,         কীটনাশক ইত্যাদি প্রয়োগ আসলে ফসলের ফলন বৃদ্ধি করে না, যেটা করে- ফলন ঘাটতি (ণরবষফ ষড়ংং) রোধ করে মাত্র।
বাংলাদেশেও মৌমাছির চাষ করে বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি, তেলবীজ এবং মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- রবি মৌসুমে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে তেল জাতীয় ফসল যেমন- সরিষা চাষ হয়, মসলা জাতীয় ফসল যেমন- পেঁয়াজ বীজ, ধনিয়া, কালিজিরা, মৌরি ইত্যাদি এবং অনেক এলাকায় লিচু, কুল ইত্যাদি ফলের চাষ হয়। এসব এলাকায় সংশ্লিষ্ট ফসলের পুষ্পায়নকালে নিয়ন্ত্রিতভাবে মৌচাষ করলে একদিকে যেমন ফসলের ফলন ও গুণগতমান বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে উৎপাদিতমধু পুষ্টি চাহিদা পূরণে বিরাট ভ‚মিকা রাখবে বা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানসহ জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সহায়তা করবে।
আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে কৃষিকাজে জমি তৈরি থেকে শুরু করে ফসল সংগ্রহত্তোর বিভিন্ন কাজে মহিলারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মহিলাদের যদি মৌমাছি পালন ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত মৌমাছি পরাগায়নে সম্পৃক্ত করা যায় তাহলে একদিকে যেমন তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে অধিকতর ভালো পরাগায়নের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন ও গুণগতমান বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তায় আরো সহায়ক ভ‚মিকা পালন করবে।
সুতরাং কৃষি উন্নয়ন প্যাকেজে মৌমাছি পরাগায়নকে ‘দ্বৈত লাভের পথ’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে অর্থাৎ একদিকে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং অন্যদিকে মধু উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি চাহিদা মেটানো। বর্তমানে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান মৌচাষকে অগ্রসর করছে কুটির শিল্পের বিকাশ ঘটিয়ে মধু বিক্রয়ের মাধ্যমে জনগণের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে। কিন্তু মৌচাষকে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এগিয়ে নিতে হবে। মৌমাছিকে প্রথমেই বিবেচনা করতে হবে পরাগায়নকারী (চড়ষষরহধঃড়ৎ) হিসেবে এবং দ্বিতীয়ত বিবেচনা করতে হবে মধু উৎপাদক হিসেবে।
পরিশেষে বলা যায়, কৃষির সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে কীটপতঙ্গ পরাগায়ন তথা মৌমাছির পরাগায়নের গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে এবং তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের জন্য আবাসস্থলের সংরক্ষণ, মাত্রাতিরিক্ত বালাইনাশকের প্রয়োগ নিরুৎসাহিতকরণ, গাছের পুষ্পায়নকালে বালাইনাশক ব্যবহার না করা, আইপিএমের বহুল প্রচার ও প্রসার, সচেতনতা বৃদ্ধি, কৃষি উন্নয়ন কর্মসূচিতে পরাগায়নের জন্য মৌচাষ কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্তিকরণ, নিয়ন্ত্রিত মৌমাছি পরাগায়নকে ঘিরে গবেষণা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রমকে নিবেদিতভাবে হাতে নিয়ে টেকসই কৃষি উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তিত আবহাওয়ায় কৃষি উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে অবশ্যই কীটপতঙ্গ পরাগায়ন বিশেষ করে মৌমাছি দ্বারা ফসলে পরাগায়নের গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে এবং এদের সংরক্ষণ, গবেষণা ও সম্প্রসারণের জন্য প্রকল্পসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যা আগামীর কৃষি উন্নয়নের টেকসই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক ভ‚মিকা পালন করবে।


ড. মোঃ আলতাফ হোসেন
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, কীটতত্ত¡ বিভাগ, ডাল গবেষণা কেন্দ্র, ঈশ্বরদী, পাবনা। মোবাইল নং- ০১৭২৫-০৩৪৫৯৫, ই-মেইল :   hossain.draltaf@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon